১৯৪৬ সালের ৮ই অক্টোবর নিরুপম সেনের জন্ম। তাঁর শৈশব কেটেছে বর্ধমান জেলার গোবিন্দপুর অঞ্চলে। সেখানকার রায়পুর হাইস্কুলে তাঁর পিতা ভুজঙ্গভূষণ সেন শিক্ষকতা করতেন। ঐ স্কুলেই নিরুপম সেন পড়াশুনা করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে স্কুল ফাইনাল পাস করেন। এরপরে ১৯৬১ সালে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজে ভর্তি হন বিজ্ঞান বিভাগে। সেই সময়েই তিনি ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন এবং দ্রুত জনপ্রিয় ছাত্র নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি অত্যন্ত সুবক্তা ছিলেন এবং মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখতেন। ছাত্রাবস্থাতেই নিরুপম সেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। তাঁর পার্টি সদস্যপদের প্রস্তাব করেছিলেন সি পি আই (এম) নেতা মদন ঘোষ এবং সমর্থন করেছিলেন সুশীল ভট্টাচার্য। ১৯৬৬ সালে নিরুপম সেন বর্ধমান জেলায় ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যেই তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হয়েছেন এবং তারপরে কলা বিভাগেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শিক্ষান্তে তিনি প্রথম জীবনে কিছুদিন শিক্ষকতার কাজ করেছিলেন। প্রথমে বর্ধমানের সিএমএস হাইস্কুলের প্রাতঃবিভাগে এবং তারপরে টিকরহাট হাইমাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। এরপরে ১৯৬৮ সালে তিনি পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে বর্ধমানে অনুষ্ঠিত হয় মতাদর্শগত প্রশ্নে সিপিআই(এম)-র কেন্দ্রীয় প্লেনাম।প্লেনামে অংশ নিয়ে যেখানে পলিটব্যুরো সদস্যরা যেখানে রাত্রিবাস করতেন সেই বর্ধমান ভবনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন নিরুপম সেন। ডাইনিং রুমে টেবিলের ওপর চাদর পেতেই শুতেন পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া ও অন্যান্য পলিটব্যুরো সদস্যরা। বাইরে বারান্দায় অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে শুতেন নিরুপম সেন।১৯৬৮ সালেই নাদনঘাটে বর্ধমান জেলার দশম সম্মেলনে নিরুপম সেন সিপিআই(এম)-র জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮৯ সালে কমরেড রবীন সেন বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক পদ থেকে পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীতে এলে বর্ধমান জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিরুপম সেন। সেই সময় থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন।৬ এবং ৭ এর দশকের অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় এক অংশে তীব্র কৃষক আন্দোলন এবং অন্য অংশে তীব্র শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল। কমরেড নিরুপম সেন লালঝান্ডার এই তীব্র আন্দোলনের স্রোতে মিশে গিয়েছিলেন। এর জন্য অন্যান্য সিপিআই(এম) নেতাদের সঙ্গে তাঁকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিলো বলেই বামফ্রন্টের তরফে অভিযোগ ছিল। ১৯৭০ সালের ১৬ মার্চ রাতে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ফেলে দেওয়ার পরদিন যুক্তফ্রন্টের ডাকে সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিলো। ধর্মঘটের দিন বর্ধমানে তেলমোড়িয়া রোড দিয়ে ধর্মঘটের সমর্থনে একটি মিছিল থেকে সাঁইবাড়ির কংগ্রেস কর্মীদের বাড়ি চড়াও হয়েছিল বাম কর্মী সমর্থকরা।যদিও সেদিন ঐ মিছিলে নিরুপম সেন ছিলেন না, তিনি ছিলেন কার্জন গেটের সামনে আরেকটি মিছিলে। কিন্তু নিরুপম সেন সহ বহু সিপিআই(এম) নেতার নাম সাঁইবাড়িতে আক্রমণের অভিযোগে জড়িয়েছিল। তাঁর ও বর্ধমানের বামনেতাদের নির্দেশেই এই ভয়ংকর গণহত্যা হয়েছিল বলেই অভিযোগ ছিল। সাঁইবাড়িতে গণহত্যা চালিয়ে মাকে জোর করে ছেলের রক্তমাখা ভাত খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। আর এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন কমরেড নিরুপম সেন, মরার আগেও এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান নি তিনি।যদিও আদালতে, সাঁইবাড়ি হত্যা মামলায় নিরুপম সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদৌ টেকেনি। কিন্তু এই ঘটনার পর নিরুপম সেন সহ বর্ধমানের অনেক সিপিআই(এম) নেতা তখন আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিরুপম সেনও বর্ধমান শহরেই আত্মগোপন করে মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের সাহায্য নিয়ে পার্টি সংগঠনের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন।সেই সময় তাঁর ছদ্মনাম ছিলো ‘বিজন’। এর আগে ছাত্র আন্দোলনের সময়েও তিনি ‘হরিদাস’ ছদ্মনাম নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে রেল ধর্মঘটের সময় অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। আত্মগোপনে থাকা সেই সব কর্মী ও নেতৃবৃন্দের বর্ধমানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা ও খাবার সরবরাহের কাজেও নিরুপম সেন সক্রিয় ছিলেন।১৯৭৭ সালে বর্ধমান কেন্দ্রে সিপিআই(এম) জয়ী হয়। সিপিআই(এম)-র শ্রদ্ধেয় নেতা প্রয়াত কমরেড বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টচার্যকে হারিয়ে সেবার জিতেছিলেন। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হওয়ার পরে বর্ধমানে পার্টির পুনর্গঠনে শ্রমিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদির আন্দোলনে মধ্যবিত্ত অংশের মানুষকে সংগঠিত করতে নিরুপম সেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সালের নির্বাচনেও এর ফলে সিপিআই(এম) এই কেন্দ্রে জয়ী হয়। পরেরবার অর্থাৎ ১৯৮৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে আরও বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন নিরুপম সেন। সেই তাঁর প্রথমবার বিধানসভায় প্রবেশ। কিন্তু তারপরে তিনি আবার সংগঠনের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। ১৯৮৫ সালেই নিরুপম সেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। ১৯৯৫ সালে নিরুপম সেন সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন, জেলা থেকে রাজ্যে বর্ধিত দায়িত্ব নিয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে কলকাতায় সিপিআই(এম)-র ষোড়শ কংগ্রেসে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের পার্টি কংগ্রেসে তিনি পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর লেখা ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘বিকল্পের সন্ধানে’, ‘বর্তমান সময় ও আমাদের পার্টি’, ‘অর্থচিন্তা’, ‘ডাঙ্কেল প্রস্তাব ও ভারতের সার্বভৌমত্ব’, ‘চীনের ডায়েরি’, ‘সময়ের দর্পণে কমিউনিস্ট ইশতেহার’, ‘সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলায়’, ‘প্রসঙ্গ মতাদর্শ’, ‘কেন এই বিতর্ক’, ‘শ্বেত পারাবতের সন্ধানে’, ‘অশান্ত কাশ্মীর’ ইত্যাদি বই বাম মনভাবাপন্ন মানুষদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।২০০১ সালে নিরুপম সেন ফের বর্ধমান (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এবার বামফ্রন্ট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৬ সালেও তিনি ঐ কেন্দ্র থেকেই পুনর্নির্বাচিত হন। এবারও তিনি শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী হন। পরবর্তীকালে তিনি এরসঙ্গে বিদ্যুৎমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন। বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসাবে বিধানসভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সমৃদ্ধ ভাষণ দেওয়ার জন্য তিনি যেমন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তেমনি বামফ্রন্ট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসাবে তিনি রাজ্যের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। শিল্পায়নের এই দশবছরের পর্বে কৃষির সাফল্যের ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে কৃষক খেতমজুরদের স্বার্থরক্ষা করে রাজ্যে শিল্প এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টেনে আনায় তিনি দক্ষতার নিদর্শন রেখেছিলেন। তাঁর সময়েই পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে শিল্প বিনিয়োগ টেনে আনায় এগিয়ে আসছিল বলেই দাবি করেন বামেরা। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টানা আলোচনার মাধ্যমে তেল প্রাকৃতিক গ্যাস, ইস্পাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ আনাতেও তিনি সাফল্য দেখিয়েছিলেন। আবার টাটাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে উত্তরাখন্ড থেকে তাদের অটোমোবাইল প্রকল্প এরাজ্যের সিঙ্গুরে টেনে আনাতেও তিনি সফল হয়েছিলেন। যদিও শেষপর্যন্ত সিঙ্গুরে আর তা রূপায়িত হয়নি। সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে জোর করে চাষীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধেই। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশী ‘খলনায়ক’ হিসাবে উঠে এসেছিল শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের নাম। বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসানের জন্য বুদ্ধদেবের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় নিরুপম সেনকে। এই বিতর্ক আজও চলছে।২০১৩ সালে নিরুপম সেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সুস্থ হলেও পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ফলে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে সরে যান। ২০১৫ সালের পার্টি কংগ্রেসে তিনি সিপিআই(এম)-র কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হন। অসুস্থ অবস্থাতেও কমরেড নিরুপম সেন হুইলচেয়ারে বসে পার্টির অনেক সভা সম্মেলনে যোগ দিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, জনস্বাস্থ্য ও জনশিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সদা উদ্বেগ প্রকাশ করতেন তিনি।সোমবার ভোরে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সে মারা গেলেন নিরুপম সেন। খুব কম মানুষই তাঁর সারা জীবনের লড়াইকে মনে রেখেছেন। কমরেড নিরুপম সেন মানেই আজও সাঁইবাড়ি-সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম। ‘বদনামের’ আড়ালে হারিয়ে গেল এক লড়াকু নেতার জীবন সংগ্রামের ইতিহাস। Saibari Killings: Surviving Kin Hail Commission. This loathing old tradition of Sainbari got momentum after the incident and many extremely cruel incidents took place in and around Burdwan town, three of which are mentioned below: Burdwan (WB) Mail. Monday, August 3, 2020 A few other eminent personalities, like Subodh Chowdhury, Sushil Bhattacharyya, Ramnarayan Goswami, Abdul Rashid, Ashwini Hazara, et al … Sainbari earned a bad name in the town and that bad reputation continued for a long time as its members used to flex muscles frequently, torture innocent poor people and were also involved in different criminal activities. The Sainbari incident occurred in 1970 in the house of Sain family in Bardhaman in West Bengal in India, where several innocent people were allegedly killed by members of the CPI(M), although it has not been proved so in court.